BoiPallab Group

"মৃত্যু ব্যবসায়ীর মৃত্যু": নোবেল পুরস্কারের ইতিবৃত্ত

 

"মৃত্যু ব্যবসায়ীর মৃত্যু": নোবেল পুরস্কারের ইতিবৃত্ত


"মৃত্যু ব্যবসায়ীর মৃত্যু": নোবেল পুরস্কারের ইতিবৃত্ত


সম্মানজনক ও দামি পুরস্কার হলেও নোবেল পুরস্কারের পেছনে আছে কারখানায় বিস্ফোরণ ও মৃত্যুর মতো করুণ ঘটনা। নাইট্রোগ্লিসারিন দিয়ে বিভিন্ন বিস্ফোরক ও ডিনামাইট তৈরির কারিগর আলফ্রেড নোবেল মর্মান্তিক এ ঘটনার পর নিজের অর্জিত অর্থ মানবকল্যাণে বিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।


দারিদ্র্যতা থেকে বাস্তবতার শিক্ষা

১৯০১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক এবং দামি পুরস্কার হিসেবে পরিচিত নোবেল পুরস্কারের কথা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পৃথিবীর সেরা মানুষদের চেহারা। প্রতি বছর রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, চিকিৎসা, সাহিত্য ও শান্তিতে যে মানুষগুলো এই পুরস্কার পাচ্ছেন, বিশ্ববাসীর প্রতি তাদের অবদান অনস্বীকার্য। অথচ সম্মানীয় এই পুরস্কারটি দেওয়ার ব্যবস্থা যিনি করে রেখে গিয়েছিলেন, তার শৈশব কেটেছিল ভীষণ দরিদ্রতার মধ্য দিয়ে। বলছি নোবেল পুরস্কারের জনক আলফ্রেড বার্নার্ড নোবেলের কথা। ১৮৩৩ সালের ২৩ অক্টোবর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে এক গরিব পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। নোবেলের পরিবার তার জন্মের আগে দরিদ্র ছিল না। বাবা ইমানুয়েল নোবেল ছিলেন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। হঠাৎ করেই ব্যবসায় পরপর মন্দা দেখা দেওয়ায় তিনি ঋণখেলাপি হয়ে পড়েন। নোবেল তার বাবার চতুর্থ সন্তান। তার জন্মের পরপরই এমন ঘটনা ঘটায় যত্ন বলতে তেমন কিছুই তার ভাগ্যে জোটেনি। কিছুদিন পর তাদের একমাত্র থাকার জায়গা বাড়িটিও আগুনে পুড়ে গেলে পুরো পরিবার সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে পড়ে। নোবেলের মাত্র চার বছর বয়সে বাবা নতুন কাজের আশায় ফিনল্যান্ড চলে যান। সে সময় সুইডেনে থাকাকালে নোবেলের পরিবারকে সাহায্য করেন তার নানা। নোবেলের মাকে তিনি একটি মুদির দোকান খুলে দেন, যেখানে অল্প বয়সী নোবেল দিন-রাত পরিশ্রম করতেন। একে তো দরিদ্র পরিবার, তার ওপর দোকানের আয়েই চলে সংসার। লেখাপড়ার সুযোগ বলতে আকর্ষণীয় তেমন কিছুই জোটেনি সে সময়। তবু অল্প বয়সেই বুঝে গিয়েছিলেন এই দরিদ্রতা কাটাতে হলে তাকে শিক্ষিত হতেই হবে। মাত্র সাত বছর বয়সে 'জ্যাকব’স প্যারিশ অ্যাপলজিস্ট স্কুল' নামে একটি দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলের শিক্ষকরা বেশ রুক্ষ মেজাজের অধিকারী হওয়ায় প্রায় সময়ই শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে জুটত বেতের বাড়ি। তবে নোবেল শান্ত মেজাজের আর শৃঙ্খলা মেনে চলায় তাকে স্কুলে পড়তে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। দোকান আর লেখাপড়া সব সামলিয়েই চলছিলেন তিনি। এদিকে বাবা ইমানুয়েলেরও তত দিনে ব্যবসার চেহারা ফিরতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ী হওয়ার সুবাদে ব্যবসার নানা বিষয় নিয়ে তার জানা ছিল। বুদ্ধি খাঁটিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন রাশিয়ান মিলিটারির জন্য অস্ত্র তৈরির একটি কোম্পানি। এই ব্যবসায় অল্প সময়েই তার ভাগ্য ফেরে। পরিবারকেও রাশিয়া নিয়ে আসেন। নোবেলের বয়স তখন ৯ বছর। অল্প বয়স থেকেই নোবেলের বুদ্ধিমত্তা প্রকাশ পেয়েছিল। মাত্র এক বছর বয়সেই তিনি রাশিয়ান ভাষা আর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইংরেজি, ফরাসি আর জার্মান ভাষা শিখে ফেলেন। বাবা ইমানুয়েল তার সন্তানদের রাশিয়ার কোনো স্কুলে না পড়িয়ে বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে দেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়লেও নোবেল আগ্রহী হয়ে ওঠেন রসায়নের প্রতি। তবে তার সাহিত্যের প্রতিও ঝোঁক ছিল। রসায়ন ভালো লাগলেও সে বিষয়ে কী কাজ করা যায়, তা নিয়ে না ভেবে কিশোর বয়সে সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষক হবেন। ছেলের বিষয়ে জানতে পেরে বাবা সুকৌশলে ছেলেকে পাঠিয়ে দেন ইউরোপে। উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে এসে ছেলে তার ব্যবসায় মনোযোগ দেবে।

তরুণ বয়সে আলফ্রেড নোবেল, The New York Times

বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয়

বাবার কথা মেনে ঘুরতে বের হয়ে যান নোবেল। নিউ ইয়র্ক ও প্যারিস ঘুরতে গিয়ে সময় কাটাতে লাগলেন রাসায়নিক গবেষণাগার আর ফ্যাক্টরিতে। আর্থিক সংকট ও স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেওয়ায় ১৯ বছর বয়সে ফিরে আসেন রাশিয়ায়। এক হাজারেরও বেশি শ্রমিক নিয়ে গড়ে তোলা বাবার ফ্যাক্টরি দেখাশোনার দায়িত্ব নিলেও নিজের শরীর তত দিনে বেশ খারাপ হতে শুরু হয়েছে নোবেলের। এদিকে ব্যবসার অবস্থাও ভঙ্গুর। রাশিয়া ক্রিমিয়ার যুদ্ধে হেরে যাওয়ায় ইমানুয়েলের অস্ত্রের মূল্য পরিশোধ না করায় ব্যবসা তত দিনে বন্ধ হওয়ার উপক্রম। অস্ত্র ব্যবসার পাশাপাশি গান পাউডারের চেয়েও শক্তিশালী নাইট্রোগ্লিসারিন আবিষ্কারের চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়াতেও ইমানুয়েলের ব্যবসায় আর্থিক ক্ষতি বিশাল আকারে দেখা যায়। রাশিয়ায় সব রেখে ইমানুয়েল পুরো পরিবার নিয়ে তখন সুইডেন চলে যায়। ছিলেন শুধু নোবেলের দুই ভাই রবার্ট ও লাডভিগ। ব্যবসার যেটুকু টিকে আছে তাই দেখাশোনা করতেন দুজন। নোবেল ফিরে গিয়ে স্টকহোমে শুরু করেন গবেষণার কাজ। বয়স মাত্র ২৫ হলেও অসুস্থতা নোবেলের পিছু ছাড়েনি। এদিকে পরিবারের অবস্থাও ভালো নয়। একটি ছোট কারখানায় নিজের ল্যাবের কাজ শুরু করেন। রোজ ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করেন, ঘুমের জন্য সময় পেতেন খুব কম। বিজ্ঞানের অজানা দিক দিয়ে পরিশ্রম তাকে সে সময় ফিরিয়ে দেয়নি। খুব অল্পদিনেই তিনি নাইট্রোগ্লিসারিনের বিস্ফোরণ ঘটানো শিখে ফেলেন। এই দুর্ঘটনাই নোবেলের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।


বিস্ফোরণ থেকে নতুন সূচনা

কারখানার কাজ, গবেষণা, পরিবারের দেখাশোনা সবই চলছিল ভালোমতোই। কারখানায় নোবেলের ছোট ভাইসহ আরও কয়েকজন কাজ করতেন। ১৮৬৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর একতলাবিশিষ্ট সে কারখানায় ভয়াবহ এক বিস্ফোরণ হয়। সে বিস্ফোরণে নোবেলের ছোট ভাই এমিল, একজন সহকর্মীসহ পাঁচজন মানুষ মারা যান। কারখানায় তখন ব্ল্যাক পাউডার (গাউন পাউডারের একটি ধরন) ও নাইট্রোগ্লিসারিন নিয়ে কাজ হতো। তবে কাজের সময় তেমন কোনো সুরক্ষাবিধি মানা হতো না। ব্যক্তিগতভাবে কারও ওপর মৃত্যুর দায়ভার না পড়লেও এসব উপাদানের কারণে তাদের মৃত্যু হয় বলে পুলিশ জানায়। এ ঘটনায় নোবেল মানসিকভাবে বেশ বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। তবে এভাবে চুপচাপ থাকলে যে নাইট্রোগ্লিসারিন নিয়ে কোনো সমাধান মিলবে না, তাও তিনি জানতেন। তাই আবারও শুরু করেন গবেষণার কাজ।


দুর্ঘটনার আগে ১৮৬৩ সালে কাঠের প্লাগ সমন্বিত একটি ডেটোনেটর (বিস্ফোরক পণ্য) আবিষ্কার করেছিলেন নোবেল। ধাতব পাত্রে নাইট্রোগ্লিসারিন রেখে সেটি কাঠের প্লাগের সাহায্যে বড় একটি চার্জারে চার্জ দেওয়া হতো। প্লাগ দিয়ে ব্ল্যাক পাউডারকে অল্প চার্জ দিলেই তা তরল নাইট্রোগ্লিসারিনকে বিশাল আকারে বিস্ফোরিত হতে সাহায্য করত। এই আবিষ্কার নোবেলকে প্রথম উদ্ভাবক হিসেবে খেতাব এনে দেয়। একই বছর নাইট্রোগ্লিসারিনের সঙ্গে কাঠকয়লার গুঁড়োসহ কয়েক ধরনের গুঁড়ো মিশিয়ে একটি নতুন বিস্ফোরক আবিষ্কার করেন। সলিড বানানো হলেও তাপ দিলে সেটি বিস্ফোরকে পরিণত হতো। ১৮৬৪ সালে এই বিস্ফোরকের পেটেন্ট সুইডিশ পেটেন্ট অফিসে জমা দেওয়া হলেও দুর্ঘটনার জন্য সেটি তখন মঞ্জুর হয়নি। এরপর নতুন করে আবারও কিসেলগার, কাঠের গুঁড়ো, ছিদ্রযুক্ত সিলিকা আর দানাদার কিছু উপাদান দিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৮৬৭ সালে নাইট্রোগ্লিসারিনকে এই পদার্থগুলো দিয়ে শোষণ করিয়ে কাগজে মুড়ে তৈরি করেন ডিনামাইট। এর আবিষ্কারের পর নানা ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার শুরু হয়। এই ডিনামাইট তৈরি যে মানুষের ক্ষতি করবে, এমনটি ভাবেননি নোবেল। তার উদ্দেশ্য ছিল মানবকল্যাণেই এর ব্যবহার করা। এদিকে ভাইয়ের মৃত্যুর পর নাইট্রোগ্লিসারিনের বিস্ফোরণকে কীভাবে অব্যর্থভাবে করা যায়, তা নিয়ে ভাবা শুরু করেছিলেন তিনি। গবেষণার ফলে আবিষ্কার করেন ছোট ধাতুর তৈরি ব্লাস্টিং ক্যাপ ডেটোনেটোর। এটি কেবল নির্দিষ্ট তাপে বিস্ফোরিত হবে। তার এই উদ্ভাবনের পর সে সময়ের কোনো বিস্ফোরণে তো বটেই, বর্তমানেও এর ব্যবহার হচ্ছে। ১৮৭৫ সালে আবিষ্কার করেন ডিনামাইটের চেয়ে অধিক শক্তিশালী, স্থিতিশীল, নিরাপদ এবং পানির নিচেও বিস্ফোরণযোগ্য ‘গ্যালিগনাইট’ বিস্ফোরক। ১৮৮৭ সালে নাইট্রোসেলুলোজ ও নাইট্রোগ্লিসারিনের মিশ্রণে বুলেট এবং কামানের শেলে ব্যবহারের জন্য 'ব্যালিস্টিট' নামে প্রোপ্যালেন্ট তৈরি করেন। ফরাসি মিলিটারিরা এর প্রতি কোনো আগ্রহ না দেখালে তিনি ইতালির মিলিটারির কাছে লাইসেন্স করিয়ে নেন। তার এমন সিদ্ধান্তে ফরাসি সরকার তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালায়, গবেষণাগারে অভিযান চালিয়ে অনেক সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করে। সরকারের এমন কাজে মনঃক্ষুণ্ন হয়ে ফ্রান্স ছেড়ে আজীবনের জন্য ইতালিতে চলে যান নোবেল।


নোবেল পুরস্কারের যাত্রা

ডিনামাইট আবিষ্কারের পর নোবেলকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে যতই তার উপার্জন বাড়তে থাকে, ততই তিনি মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন। এর মূল কারণ ছিল ভাইয়ের মৃত্যুর পর সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি খবর। বিস্ফোরণের সেই ঘটনার পর একটি পত্রিকা ভুল করে নোবেলের মৃত্যুসংবাদ ছেপে শিরোনামে লিখেছিল, 'মৃত্যু ব্যবসায়ীর মৃত্যু'। দিনের পর দিন এই পীড়া নিয়ে বাঁচতে চাননি নোবেল। ডিনামাইট আবিষ্কারকে নিজের ভুল ভেবে এর প্রায়শ্চিত্ত করতে এবং পৃথিবীকে সুন্দর করতে দারুণ এক সিদ্ধান্ত নেন। নিজের ৯৪ ভাগ সম্পত্তি দিয়ে পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য, শান্তি এই পাঁচটি বিষয়ে বৈশ্বিকভাবে সেরা ব্যক্তিদের পুরস্কার দেওয়ার জন্য ফান্ড নির্মাণ করেন। ১৯০১ সালে তার মৃত্যুর পাঁচ বছর পর প্রথমবারের মতো নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।


আলফ্রেড নোবেলের উইল

আলফ্রেড নোবেল তার উইলে যে মানুষগুলো তার সঙ্গে ছিলেন এমন বেশ কয়েকজনকে প্রচুর অর্থ দান করে গেছেন। ভাই রবার্ট নোবেলের দুই ছেলে হালমার নোবেল এবং লুডভিগ নোবেল প্রত্যেকের জন্য দুই লাখ ক্রাউন, ভাইপো ইমানুয়েল নোবেলকে তিন লাখ ও ভাতিজি মিনা নোবেলকে এক লাখ ক্রাউন, ভাই রবার্ট নোবেলের মেয়ে ইনগিবোর্গ ও টায়রা দুজনের প্রত্যেককে এক লাখ ক্রাউন, প্যারিসের মিসেস ব্র্যান্ডের সঙ্গে অবস্থানরত মিসেস ওলগা বোয়েতগারকে এক লাখ ফ্রাংক, মিসেস সোফি ক্যাপি ভন ক্যাপিভারকে বছরে ছয় হাজার হাঙ্গেরিয়ান ফ্লোরিন, স্টকহোমের মিস্টার আলারিক লিয়েদবেককে এক লাখ ক্রাউন, প্যারিসের মিস এলিস অ্যান্টুনকে বছরে আড়াই হাজার ফ্রাংক, আমেরিকার টেক্সাসের ওয়াটারফোর্ড নিবাসী মিস্টার আলফ্রেড হ্যামন্ডকে দশ হাজার আমেরিকান ডলার দিয়ে যান আলফ্রেড নোবেল।

আলফ্রেড নোবেলের উইল, The New York Times


নোবেলের ভাষায় বাকি সম্পদের বিলিবণ্টন

আমার মূলধন, যা আমার নির্বাহী কর্মকর্তারা নিরাপদে বিনিয়োগ করেছেন, তা দিয়ে একটা তহবিল গঠন করা হবে। এই তহবিল থেকে বার্ষিক যে সুদ পাওয়া যাবে, তা প্রতি বছর পুরস্কার হিসেবে পাবেন যারা আগের বছর মানুষের কল্যাণে সর্বোচ্চ অবদান রেখেছেন। বার্ষিক অর্জিত মোট সুদকে সমান পাঁচ ভাগে ভাগ করা হবে। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করেছেন এমন ব্যক্তিরা এক ভাগ করে, কোনো আদর্শ স্থাপনের লক্ষ্যে সাহিত্যে সবচেয়ে ভালো কাজ করেছেন, দুটি দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে, সেনাবাহিনীর বিলুপ্তি বা সৈন্যসংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে, শান্তি সম্মেলনের আয়োজন ও প্রচারের লক্ষ্যে সবচেয়ে বেশি কিংবা সবচেয়ে ভালো কাজ করেছেন এমন ব্যক্তিরা এক ভাগ করে পাবেন। পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের পুরস্কার দেবে সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস, শরীরতত্ত্ব কিংবা চিকিৎসাবিজ্ঞানের পুরস্কার দেবে স্টকহোমের ক্যারোলিন ইনস্টিটিউট, সাহিত্যের পুরস্কার দেবে অ্যাকাডেমি ইন স্টকহোম এবং শান্তি পুরস্কার দেবে নরওয়ের পার্লামেন্ট (স্টরটিং) কর্তৃক নিয়োজিত পাঁচ সদস্যের এক কমিটি। এই পুরস্কার দেওয়ার জন্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের জাতীয়তার প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। স্ক্যানডিন্যাভিয়ান হোক বা না হোক, যোগ্যতম ব্যক্তিই এই পুরস্কার পাবে। আমার উইল কার্যকর করার জন্য মিস্টার র‍্যাগনার শোলম্যান ও মিস্টার রুডলফ লিজেকুইস্টকে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করছি। এই কাজের জন্য তারা যে কষ্ট করবেন, তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে মিস্টার র‍্যাগনার শোলম্যান এক লাখ ক্রাউন মিস্টার রুডলফ লিজেকুইস্টকে পঞ্চাশ হাজার ক্রাউন পাবেন। বর্তমানে আমার সম্পদের মধ্যে কিছু অংশ প্যারিস ও সেন্ট রেমোতে রিয়েল এস্টেট হিসেবে এবং আমানত হিসেবে ইউনিয়ন ব্যাংক অব স্টকল্যান্ডের গ্লাসগো ও লন্ডন শাখায়; প্যারিসের কম্পটয়ের ন্যাশনাল ডি-স্কম্পটি এবং আলফেন মেসিন অ্যান্ড কোম্পানিতে; প্যারিসের স্টকব্রোকার এমভি পিটার অব ব্যাংক ট্রান্স-আটলান্টিকে; বার্লিনের ডিরেকশান ডার ডিসকনটো গেশেলস্ক্রাফট এবং জোসেফ গোল্ডস্মিডট অ্যান্ড কোম্পানিতে; রাশিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকে এবং পিটারসবুর্গে মিস্টার ইমানুয়েল নোবেলের কাছে; গুটেনবার্গ ও স্টকহোমে স্ক্যানডিনাভিস্কা ক্রেডিট আক্টিয়েবোলাগেটে এবং প্যারিসের ৫৯ নম্বর মালাকফ অ্যাভিনিউতে আমার স্ট্রং-বক্সে জমা আছে। এগুলো ছাড়াও আছে পেটেন্ট, পেটেন্ট ফি বা রয়্যালটি থেকে আয়। আমার নির্বাহীরা এই হিসাবের পূর্ণ বিবরণ আমার দলিলপত্র থেকে খুঁজে বের করবেন। আমার এই উইলটিই একমাত্র বৈধ উইল। আমার মৃত্যুর পর যদি এর আগে করা কোনো উইল খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে সেগুলো বৈধ বলে গণ্য হবে না। সবশেষে আমার বিশেষ ইচ্ছা আমার মৃত্যুর পর কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমার শিরা কেটে দেখবেন এবং মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন। তারপর আমার দেহ কোনো শ্মশানে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হবে।

প্যারিস, ২৭ নভেম্বর, ১৮৯৫

আলফ্রেড বার্নার্ড নোবেল

আলফ্রেড বার্নার্ড নোবেল, britannica.com

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, বাংলাদেশ প্রতিদিন


মোঃ আব্দুর রহিম খান
শিক্ষার্থী, সেনা পাবলিক স্কুল ও কলেজ


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন