BoiPallab Group

বেনামী বাঁধন

 

বেনামী বাঁধন

ভার্সিটির দীর্ঘ ছুটির এই সময়টা গ্রামে বেশ কাঁটছে। প্রিয় মুখের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও কতো নতুন মুখ। ধীরু পাড়ার রিক্সাওয়ালা ওয়াহিদ চাচার মেয়ে পুতুল। এবার নবম শ্রেণিতে উঠেছে, বড্ড দুষ্ট-মিষ্টি, চঞ্চল একটা মেয়ে। রোজ বিকেলে ওর সঙ্গ পেতে আমার বেশ ভালো লাগে। 

সেদিন বিকেলে পুতুল চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এমা! বুবু... তুমি দেহি নাক হুরাইছ।
হ্যাঁ রে নাক ফুঁটা করেই ফেললাম। কেন! আমাকে দেখতে বুঝি খুব বেশি পঁচা লাগছে?
না, না...খুব সুন্দর লাগতাছে! এক্কেবারে নতুন বৌয়ের লাহান! ঘটনা কি কও দিহি বুবু।
আমি অবাক হয়ে বললাম, কী?
বিয়া টিয়া করছ নাকি!
তাই! তোর কি তাই মনে হয়?
তা না হয় কি! এত্ত বড় হইয়া গেলা। শহরের ভার্সিটিতে পড়। এতোদিন অবদি না হুরাও নাই। তবে যাই কর,বিয়ায় কইলাম দাওয়াত দিবা। জব্বর মজা করমু! 
মুচকি হেসে আমি পুতুলের কান টেনে ধরতেই ও চেঁচিয়ে উঠে বলল, "আরে, আরে বুবু কর কি! আমি তো দুষ্টুমি করছিলাম। লাগছে তো, ছাড়ো না।" দুজনেই খিটখিটিয়ে হেসে দিলাম।

পুতুল হাটুর উপর জামা টেনে হাটু ভাঁজ করে দু'হাতে দু'পা জড়িয়ে হাটুর ভাঁজে চিবুক রেখে সূর্য অস্ত যাওয়া পশ্চিমা রক্তিম আকাশে অপলক তাকিয়ে আছে। দুজনেই বেশ চুপ। পুতুলের দুচোখ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু রেখা টেনে দিল। কারণ জিজ্ঞেস করতেই যেন কান্না আরও বেড়ে গেল। আমি অশ্রু মুছে দিতেই ও আমাকে জড়িয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। আমি তার পিঠের উঠা নামা স্পষ্ট টের পাচ্ছি।

কিছুক্ষন পরে পুতুল চোখের পানি মুছে আমার হাত শক্ত করে ধরল। এতোক্ষণে মেয়াটার হিচকি শুরু হয়ে গেছে। বলল, "বুবু জান, আব্বায় না আমারে বিয়া দিয়া দিবার চায়। আমি রাজি না হওয়ায় খুব বকাঝকা করছে। কইলাম এসএসসি পাসটা করি। আব্বায় কয়, এত পড়ালেহা করন লাগব না, আমি এত খরচ দিবার পারুমু না।"

একটানা পুতুলের কথাগুলো শুনে আমি হতভম্ব! বললাম, "দুর বোকা! বললেই হলো। বিয়ে দিয়ে দেয়া অত সোজা নাকি? তুই এসব বাদ দিয়ে ভালো করে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা কর। ভালো পড়াশুনা করলে দেখবি চাচা কখনো এমনটা করবে না।"

মাথায় পুতুলের কথাগুলো শূচের মত বিঁধছিল। হয় তো সত্যি সত্যিই পুতুলের বাড়িতে বিয়ের কথা হচ্ছে। হয়ত তিনুর মতো পুতুলকেও পুতুল খেলার বয়সেই শশুর বাড়ি যেতে হবে।

পুতুলের ডাকে আমার সম্মতি ফিরল, বুবু সন্ধ্যা হইয়া গেল তো! বাড়ি যাইবা না...

গল্পের নাম: বেনামী বাঁধন
লেখক: রিজয়না কামাল 
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন