BoiPallab Group

ফ্রেন্ডস ইন মিস্টেরিয়াস রিভিলেশন - ‌১ম পর্ব

 
ফ্রেন্ডস ইন মিস্টেরিয়াস রিভিলেশন - ‌১ম পর্ব

১ম পর্ব
[১]    
নীরব নিঝুম অন্ধকার পরিবেশে নদীর ধারে বসে আছে এক কিশোর। নাম তার রাফি। হালকা চাঁদের আলোয় রাফিকে দেখে মনে হচ্ছে সে যেন খুব অসহায়। বিষন্নতাপূর্ণ একজন ছেলে। সে মনে মনে তার জীবনের কিছু স্মৃতিগুলোকে স্মরণ করে বলছে সব কিছু তার জন্য ঘটেছে।

১.
৩ বছর আগের ঘটনা...
বাংলা ক্লাস হচ্ছিল। বাংলা স্যার এসে একটা সৃজনশীল লিখতে দিয়ে পরীক্ষার খাতা দেখছিলেন। রাফি পড়া লেখায় ভালো। সে কখনো পড়াশোনায় ফাঁকি দেয় না কিন্তু আজ সে লেখা বাদ দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। বাংলা স্যার বিষয়টি লক্ষ্য করে রাফিকে বললেন, 
- কি রাফি লিখছো না কেন? পড়া পড়ে আসনি?
রাফি কোনো উত্তর না দিয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে রইলো। 
স্যার আবার বলেন, 
- তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?
রাফি এবারো কোনো উত্তর দিল না। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রাফি বললো, 
- স্যার আমি কি ওয়াশরুমে যেতে পারি?
স্যার অনুমতি দিলেন। রাফি ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে পকেট থেকে ঔষধ বের করে খেয়ে নিল। রাফি আসলে বিষন্নতায় ভুগচ্ছে। রাফির মা বাবা ২ মাস আগে বাস দুর্ঘটনায় মারা যায়। সে তার চাচার বাসায় থাকে। রাফির চাচা অনেক ভালো মানুষ। রাফি ওয়াশরুম থেকে ফিরে আসে । স্যার বললেন,
- এখন ভালো লাগছে? তুমি আজকে ছুটি নিয়ে চলে যেতে পার।
রাফি 'ধন্যবাদ স্যার' বলে ক্লাস থেকে বের হয়ে এলো। ক্লাস থেকে বের হওয়ার সময় ইসাহাক বলল, 
- রাফি আজকে রাত ১০ টায় জমিদারবাড়িতে দেখা করিস।
'দেখি' বলে চলে গেল রাফি।

২.
রাত ৯ টা বেজে ১৫ মিনিট।
রাফিদের বাসায় রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ। রাফি তার চাচার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল জমিদারবাড়ি যাবে বলে। রাস্তায় সাকিবের সাথে দেখা হলো। তারা আগে একই স্কুলে পড়তো। সাকিব বললো, 
- কী রে কি অবস্থা তোর? কোথায় যাচ্ছিস এত রাতে? রাফি উত্তরে বললো, 
- এইতো ভালো, জমিদারবাড়িতে। যাবি?  
- চল। 
রাফি ও সাকিব জমিদার বাড়ির বাগানে এসে পৌঁছাল। সাথে ফারহান, ইসাহাক, সাফুওয়ানও এসেছে। সবাই মিলে আজকে পরিকল্পনা করেছে নদীর ওপারে একটি পুরাতন হাসপাতাল রয়েছে সেখানে যাবে তারা। কয়েকদিন ধরেই তারা লক্ষ করেছে যখন তারা জমিদারবাড়িতে রাতে গল্প করতে আসতো তখন কেমন জানি শব্দ শোনা যেত । 
সাফুওয়ান বললো,
- আচ্ছা চল সেখানে গিয়ে দেখি, যা হবে দেখা যাবে।সবাই এরপর নদীর ওপারের হাসপাতালটির সামনে এসে দাঁড়াল । হাসপাতালটিকে দেখতে অনেকটা লাশ রাখার জায়গার মতন মনে হচ্ছিল। অনেকটা মর্গের মতো। পরিবেশটি এতটাই ভয়াবহ যে গা ছমছম করে উঠছে। তার উপর আজকে আবার অমাবস্যার রাত। রাফি বলল,
- আমাদের ২ দলে ভাগ হয়ে ভিতরে প্রবেশ করা উচিত। আমি, সাকিব , ফারহান এক সাথে যাই । বাকিরা পিছনের গেইট দিয়ে প্রবেশ কর।
সবাই রাফির কথা মতো কাজ করলো। রাফির দল ধীরে ধীরে হাসপাতালটি পরখ করে দেখতে লাগলো। মাঝে বাইরের কুকুরের ঘেউ ঘেউ করা প্রায়ই ভয় পাইয়ে দিচ্ছিল সবাইকে। হঠাৎ করে একটা চিৎকার!রাফি বলল,
- ইসাহাকের চিৎকার মনে হলো না? সম্ভবত ২তলা থেকে আসছে। চল গিয়ে দেখি।
সবাই ২তলায় গিয়ে দেখে সেখানে কেউ নেই। রাফিরা তাদের বাকি বন্ধুদের খোঁজ করার সময় কাছাকাছি গাড়ির শব্দ শুনতে পেয়ে জায়গাটি তাড়াতাড়ি ত্যাগ  করলো এবং জমিদারবাড়িতে ফিরে এলো। কথা ছিল ১১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে জমিদারবাড়িতে থাকবে সবাই। কিন্তু ১২টা ১৫ মিনিট বেজে গেছে ইসাহাক আর সাফুওয়ান লাপাত্তা। আসেনি এখনো। 
ফারহান বলল,
- কিছু হয়নি তো ওদের?
সাকিব বলল,
- আমাদের গিয়ে দেখা উচিত।
রাফি কি যেন ভাবচ্ছিল। রাফি বলল,
- আচ্ছা চল গিয়ে দেখি। আমার কাছে একটু কেমন যেন লাগছে। কারণ এত রাতে হঠাৎ করে গাড়ির শব্দ কেন আসবে সে জায়গায়?
একটু পর রাফিরা আবার সেই হাসপাতালটিতে গেল। এবার তারা পেছনের গেইট দিয়ে প্রবেশ করলো। ধীরে ধীরে তারা ২তলায় এলো। 
রাফি বললো,
- প্রথমে কুকুরের আওয়াজ তার কিছুক্ষণ পর চিৎকার তারপরই গাড়ির শব্দ। কিছু একটা রহস্য বলে মনে হচ্ছে না? হতে পারে না ওদের ২ জনকে কেউ অপহরণ করেছে?
সাকিব বললো,
- ওরা ২ জন ভালো মার্শাল আর্ট পারে। ওদের কাবু করা এতো সোজা না। 
রাফি বললো,
- কিন্তু (একটু থেমে চিন্তিত ভঙ্গিতে) এত অল্প সময়ের মাঝে কয়েকটা আলাদা ঘটনা ঘটালো কিভাবে তারা? 
কথার মাঝে সাকিব হঠাৎ একটা কোড লক্ষ করলো পাশের দেয়ালে। সবাইকে বললো,
- দেখতো এটা। কি যেন মনে হচ্ছে। এখানে লেখা,
“Catch me when you come, find me when you go."
- এর মানে কি দাঁড়ায়? 
রাফি বললো,
- একটা তো রহস্য আছেই এখানে। আমার মনে হয় ওদের যারা অপহরণ করেছে তারাই আমাদের জন্য এই কোড দিয়েছে। কিন্তু কেন?

কেউ কিছু বুঝতে পারবে তার আগেই হঠাৎ করে  একটি গ্যাস চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং সবাই অজ্ঞান হয়ে মাঠিতে পড়ে গেল।

[২]
১.
পরের দিন সকালে ক্লাসে... 
রাফি, ইসাহাক, ফারহান, সাফুওয়ান অনুপস্থিত। বাংলা  স্যার বললেন,
- এরা কখনো এক সাথে স্কুলে অনুপস্থিত থাকে না। আজকে হঠাৎ এলো না কেন?
কেউ কিছু বলতে পারলো না। স্কুল ছুটির পর সুবাহ্ ইসাহাকের বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলো ওরা গত রাতে বাসা থেকে জমিদারবাড়ির দিকে যাওয়ার কথা বলে বের হয়েছে। সুবাহ্ আন্দাজ করলো হয়তো এসদিকেই আছে। সুবাহ্ জমিদারবাড়িতে গিয়ে দেখলো সেখানে কেউ নেই। কিন্তু একটি কাগজে কি যেন আঁকা আছে। সুবাহ্ সেই আঁকা জিনিসটি তুলে দেখলো একটি নকশা। কিছু চিন্তাভাবনার পর সে আবিষ্কার করলো নকশাটি নদীর ওপারের হাসপাতালটির।
 
২.
এক সপ্তাহ আগের ঘটনা...
প্রায় প্রতিদিন রাতে হাসপাতালটির সামনে একটি মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায়। আজকেও একটি ছোট মাইক্রোবাস হাসপাতালটির সামনে এসে দাঁড়ালো। তখন প্রায় রাত ২টা বেজে ২০ মিনিট। তারা সবাই গাড়ি থেকে নামার কিছুক্ষণ পর একটি আজব ঘটনা ঘটলো।তাদের মধ্যে একজন গাড়িটি থেকে একটি A.K 47 বের করলো এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিজের লোকদের উপর গুলি করা শুরু করলো। সবাই এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতে লাগল। হঠাৎ দলনেতা তার হাতের পিস্তলটি সরাসরি সে ব্যক্তির দিকে তাক করলো যে নিজেদের লোকদের গুলি করছে। কিন্তু সে তাকে গুলি না করে নিজের মাথায় পিস্তলটি ধরলো এবং নিজেকে গুলি করে ফেললো। গোলাগুলির এক পর্যায়ে শুধু ২জন লোক বেঁচে ছিল। এক জন সেই A.K 47 ধারণকারী আর এক জন পলায়ন। সে পালিয়ে সেই হাসপাতালটির ভিতরে লুকিয়ে যায়। খুনি লোকটি সেই পলায়নকারী লোকটিকে খুঁজতে খুঁজতে একটি কক্ষে প্রবেশ করে দেখে সে যাকে খুঁজছিল সে লোকটির মৃত দেহ পড়ে রয়েছে। সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।যখন সে কক্ষ থেকে বের হতে যাবে তখন কি দেখে এত অবাক হলো এবং ভয় পেল যে নিজের হাতের A.K 47 দিয়েই আত্নহত্যা করলো।

এখন প্রশ্ন দাঁড়ালো কেন সে এমন করলো এবং কি এমন দেখেছিলো লোকটি?

চলবে...

গল্পের নাম: ফ্রেন্ডস ইন মিস্টেরিয়াস রিভিলেশন 
লেখা: ফারহান ইশরাক 
শিক্ষার্থী, সেনা পাবলিক স্কুল ও কলেজ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন