জোছনা ভেজা রাত। চাঁদের স্বচ্ছ আলো যেন ভাসিয়ে দিয়েছে চারপাশ। হাসান গাছের গায়ে হেলান দিয়ে সিগারেট ধরালো। তার শরীর ঘামে জবজবে। তার মতে চিন্তা মুক্তির উপকরণ নিয়ে তালিকা করা হলে সিগারেটের থাকা দরকার সবার উপরে। শার্টে লাগা রক্তগুলো বিলের পানিতে ধুতে ধুতে খালিদ হাঁক দিয়ে উঠল,
- বিলের ধারে এসে বোস। ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব আছে এখানে।
হাসান কথার জবাব দিলো না। চুপিসারে বিলের ধারে এসে দম নিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছড়ালো। খালিদ পানির কাছ থেকে উঠে আসতে আসতে বলল,
- চিন্তা কি এতো? কাজ ভালো মতোই হয়েছে। এখন টাকাটা হাতে পেলেই হয়।
হাসান এর-ও জবাব দিলো না। কিছুক্ষন আগে তারা দু'জন রাজীব হায়দার নামক এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে খুন করেছে। টাকায় করা কাজ। কথা ছিল খুন করার পর লাশ বিলের পানিতে ভাসিয়ে দিবে। কিন্তু কোননা কোনদিন তা পাড়ে ভেসে উঠে আসতে পারে। তাই একটু বাড়তি পরিশ্রম করে গোর খোদাই করে তাতেই লাশ শুয়ে রেখেছে। গোর এতোটাই কাটা হয়েছে যে দুজন সহজেই চাপা দেওয়া যাবে। তবে মাটি চাপা এখনও দিয়া হইনি। কেন? তার উত্তরে হাসান বলেছিল একটু বিশ্রাম নেওয়া হোক। তারপর আবার কাজে লাগা যাবে। আর আশেপাশ জনমানবহীন। তাই তাড়াহুড়ার কিছু নেই। খালিদও তাতে সায় দিলো। তবে তারপর থেকে হাসান নিশ্চুপ।
খালিদ আগ বাড়িয়ে আবার বলল,
- তো বস চিন্তা কিসের? চল এখন মাটি চেপে দেই। ছুরি গুলোও চেপে দিতে হবে, তাইলে কোন ক্ষুদ ধরা পড়বে না।
সিগারেটের শেষ অংশটুকু পায়ের নিচে পিষে দিয়ে হাসান হঠাৎ বলে উঠল,
- খালিদ! একটা আবদার রাখবি আমার?
খালিদ হাসানের পাশে এসে পকেট থেকে সিগারেট বের করতে করতে দুষ্টুমি ভঙ্গিতে বলল,
- আজ্ঞে বলুন যাহাপনা।
হাসান বলল,
- তুই টাকাটা পাওয়ার পর কি করবি?
খালিদ বলল,
- দেশের বাহিরে একটা ট্রিপ মারব ভাবতেছি।
হাসান বলল,
- তোর থেকে টাকাটা আমার বেশি প্রয়োজন।
খালিদ খানিকটা ভুরু কুঁচকে বলল,
- মানে? আমাদের মধ্যে ফিফটি-ফিফটি লেনদেন হয়েছে। এর বাহিরে কিছু পারব না দিতে।
হাসান অনুরোধের ভঙ্গিতে বলল,
- একটু দেখ না। আমার অতি প্রয়োজন।
খালিদ বলল,
- কেন? কি এমন কাজ যে আমার থেকেও ভাগ বসাতে হবে? বরং দেখ, আমার বেশি পাওয়া দরকার। গোর খোদাইয়ে কিন্তু আমিই বেশি পরিশ্রম করেছি। আর তুই? একটু কাজ বসাতেই ঘামে মাখামাখি।
হাসান বলল,
- দেখ আমার মায়ের জন্য টাকাটা অনেক প্রয়োজন। তার ক্যান্সারের টাকা জোগাড়ের জন্য এই খুনটায় হাত লাগিয়েছি।
খালিদ খানিকটা হেসে বলল,
- অপবিত্র টাকা দিয়ে আবার কিসের অপারেশন?
হাসান বলল,
- এছাড়া কোন পথ নেই আমার।
খালিদ বলল,
- দেখ ভাই আগে থেকে এরকম কিছু বলা ছিল না। আর আমি পারতেছি না বাড়তি টাকা তোকে দিতে। আমার কাজ আমি করেছি আর টাকাটা আমিই নিব। আমি ফিফটি তুই ফিফটি। এর বেশি কিছু না।
হাসান বলল,
- তো তুই দিবি না?
খালিদ মাথা নেড়ে সায় দিলো সে দিতে রাজি নয়। হাসান মুচকি হেসে বলল,
- তাহলে অন্য উপায় কাজে লাগাতে হবে।
খালিদ ভুরু কুঁচকে বলল,
- অন্য উপায় মানে?
হাসান আবার নিশ্চুপ। চাঁদের দিকে তাকাল। বেশ কিছুক্ষন পর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খালিদের দিকে মুখ ফিরালো।
হঠাৎ একটা বিভৎস চিৎকার ভেসে উঠল। সাথে ছুরির চালানোর তীক্ষ্ণ আওয়াজ। আবার হঠাৎ করেই নিস্তব্ধ হয়ে গেল চারদিক। যেন কিছুই হয়নি।
জোছনা আলো পড়েছে তাদের দু'জনের উপর। তবে তাঁদের দেহের উল্টোদিকে একটি মাত্র ছায়া'ই দাঁড়িয়ে আছে।
লেখা: সাফায়েত আহমেদ সাকিব
শিক্ষার্থী, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ