BoiPallab Group

আর্তনাদ

আর্তনাদ

হঠাৎ করে তার চোখ খুলতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনার পর আবছা দৃষ্টিতে সে নিজেকে আবিষ্কার করলো কোনো এক ছোট্ট নদীর পাড়ে পড়ে আছে।

সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়েছে, তাই হয়তো লোকের আনাগোনা কম। একটু একটু ঠান্ডা লাগছে। বৃষ্টির পর আকাশে তারাদের যেন কোনো এক আনন্দময়ী উৎসব চলছে। 

অনেক্ষণ ধরে সে আকাশের অপরূপ দৃশ্যের রূপসুধা পান করে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু তাকিয়ে থাকার খানিকটা সময় পর সে চোখের উপর হাল্কা ব্যথা অনুভব করলো। কিছু লোক বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে তাকে উদ্দেশ্য করে ঢিল ছুঁড়েছিল। হয়তো কোনো এক পাথরের আঘাতে সে এই ব্যথার উপলব্ধি করছে। বৃষ্টি শেষ হওয়ার পরও একটি মেয়ে শিশু তার বাবার হাত ধরে রাস্তার ধাঁর দিয়ে ছাতার নিচে হেঁটে হেঁটে চলে গেলো ।

তাদেরকে দেখেই হঠাৎ করে তার নিজের পরিবারের কথা মনে পড়ে গেল। কী মর্মান্তিক লোমহর্ষক অত্যাচারে তারা মারা গিয়েছে। কোনো দোষ ছিল না, শুধু্মাত্র নিচু জাত হওয়াতে তার বাবাকে কিছু উঁচু জাতের লোক পিটিয়ে হত্যা করেছে। তখন সে অনেক ছোট ছিল। তবুও সেই দৃশ্য তার স্মৃতি থেকে ভুলে যাবার নয়। যখন সে একটু বড় হয়েছে তখন তার মাকে গলায় দড়ি দিয়ে তার সামনেই গাছের সাথে ফাঁসি দিয়ে মেরে ফেলেছে। কিন্তু এই অন্যায়ের বিচার সে আজও পায় নি। আর কয়েকমাস আগে তার বড় ভাইকে কিছু লোক ধরে নিয়ে গিয়েছিলো হয়তো কোনো এক গলির টর্চার সেলে। সেখানে অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে তার ভাইয়ের উপর গরম পানি ঢেলে দেয়। কোনোমতে বেঁচে ফিরলেও সারা রাত অসহ্য যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে তার ভাইও জীবন নদীর ওপারে পাড়ি জমায়। সবার একটাই দোষ তারা নিচু জাতের। 

এখন সে সর্বহারা। এই টুকুন বয়সে কি নির্মম অভিজ্ঞতার সে স্বীকার হয়েছে তা অকল্পনীয়। এমনি সময় সে নিজের চোখে কিছুটা ঝাপসা দেখলো। স্বল্প সময়ের ব্যবধানেই তার দুটো গাল অশ্রুতে ভিজে হয়ে গেলো একাকার। তাই সে আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে জানাতে লাগলো তার আর্তনাদ। তার চিৎকার শুনে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে তার উপর আক্রমণ চালাবে বলে। তার চিৎকারের শব্দ নদীর ওপারে এক লোকালয় পর্যন্ত পৌছালো। সেখানে এক ছোট্ট মেয়ে তার বাবার কোলে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ছোট্ট মেয়েটি চিৎকার শুনে বলে উঠলো,
- বাবা আমার খুব ভয় করছে।
মেয়েটির বাবা তার ভয় কাটানোর জন্য বললেন,
- মা, ও কিছু না। দূরে কোথাও হয়তো এক কুকুর ডাকছে।
এমনি প্রতিরাতেই হাজারো লক্ষ কুকুর তাদের আর্তনাদ ব্যক্ত করে অসহায়ভাবে। কেউ শুনতে না পেলেও হয়তো তাদের অসহায় চিৎকার শুনতে পায় নিষ্পাপ শিশুরা। 

মানুষকে সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে। অথচ এত ক্ষমতা থাকতেও তারা নির্মম অত্যাচার চালায় নিষ্পাপ প্রাণীদের উপর। আর সবচেয়ে বড় আক্ষেপের বিষয় মানুষের এত বোধ শক্তি থাকার পরেও তারা নিম্ন শ্রেণির নিষ্পাপ জীবের আর্তনাদগুলো না উপলব্ধি করার এক বড় অক্ষমতা নিয়ে বেঁচে আছে...

গল্প: আর্তনাদ
লেখা: শেখ রাহাত সিদ্দিকী
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন