BoiPallab Group

অণূঢ়া

 

অণূঢ়া

আহালয়া গাঢ় লাল টিপ ও গাঢ় কালো কাজল দিয়ে সেজেছে। সবেমাত্র স্নান করে চুল শুকাতে ছাদে এসেছে। গালগুলো সে আজ ভালোই ঘষেছে, লাল লাল হয়ে আছে। তারা ঠাকুরবাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে এই লালময়ী আভা থাকলেই হলো। রোদ তার কালচে লাল গালগুলোকে আরো লাল বানিয়ে দিচ্ছে। আচ্ছা তার নাম আহালয়া না হয়ে রৌদ্রময়ী হলেও তো পারতো!

-দিদিমনি সোনো পাওডার মাখছোনি? তোমারে দেহি সাদা সাদা লাগতাছে ।
- নাহগো মিতুল পিসি কিছুই দেইনি মুখে, চুল শুকালেই ঘরে চলে যাবো। 
-অবশ্য নয়া রিশতা আইলে মাইয়াগোর চেহারাছবিতে আলাদাই চমক আইসা পরে। কিন্তু দিদিমনি রৌদ্রে থাইকা চেহারাটারে কালা বানাইয়েন না, ভিতরে যান।
- কালো বরণ তো কালোই থাকে পিসি, একে আর কালো বানালে যা না বানালেও তা।

মিতুল পিসি কিছু না বলেই চলে গেলো। আহালয়ার শরীর জুঁড়ে হাল্কা বাতাস ও রোদের ছোঁয়া। ছাদে থাকতে ভালো লাগলেও রোদে মুখ জ্বালা করছে।

- মা , দেখেতো এই লাল শাড়ীটা পরবো কিনা?
- হ্যাঁ হ্যাঁ লালটাই পর। তোকে যা লাগচেরে মা!! একদম দেবী দুর্গার মতোন!
- কিন্তু মা দুর্গা মা তো কৃষ্ণবর্ণের ছিলনা। আমাকে ঠিক কালীর মতো লাগছে , তাইনা?
- কীযে , তোর কথার সাথে পারিনা বাবা।

এইনে সোনার বালাগুলো পরেনে। হাত খালি দেখলে আবার কিনা কি ভাবে!

মা ও বড় পিসি দুজনে তার হাতে বালা পরিয়ে দিচ্ছে। কতোটাইনা আদর -খাতির করা হচ্ছে তাকে। মেয়েদের বিদায়ের আয়োজন এতো সুন্দর করে কেন হয় কেজানে। অবশ্যি তাকে কোনোমতে বিয়ে দিলেই বাঁচে। ঠাকুরবাড়ির মেঝো মেয়ে কৃষ্ণবর্ণের শুনে লোকের কতো না কথা -কোলাহল। মেয়ে বিয়ে হবে কী করে!

- আহালয়া , এই আহালয়া!
- মা ফিসফিস করে কথা বলছো কেন?
- আরে শোন, শরীর ভালোমতো ধুয়েছিস তো?
- মানে!
- আরেহ তোর রঙ যেন চাঁপা লাগে সে বন্দোবস্ত তো করতে হবে। কাঁচা হলুদ বাটা দিয়ে স্নান করেছিস তো? নয়া বউদের গায়ের রঙ বেশি কালো মানায়না।
- আহ্ মা ফিসফিস করে কথা বলা বন্ধ কর তো! তোমার কথা শুনতে ভালো লাগছেনা।

আহালয়া উঠে পড়লো, বারান্দায় এসে দাড়ালো। কীই সুন্দর ,স্নিগ্ধ বিকেল। কেজানে পাত্রপক্ষ এতো দেরি করছে কেন?
তার যে আর তর সইছে না!!
প্রকৃতি আজ এক বিস্ময়কর খেলা খেলছে। তাকে আজ আসলেই অপরুপ রুপবতী লাগছে। অবশ্য তার কাছে নিজেকে সবসময়ই সুন্দর লাগে। মানুষের নজরে তা কেন যেন পড়েনা!

সূর্য নিভিয়ে আসছে। বারান্দায় আহালয়ার হালকা হালকা শীত করছে। হঠাৎ নিচে শোরগোল চিল্লাচিল্লি শোনা গেল। আহালয়ার সমস্ত শরীর দিয়ে তরঙ্গের গতিতে স্রোত প্রবাহিত হলো— পাত্রপক্ষ চলে এলো নাতো?
সে ঘোমটা টেনে দিয়েই দৌড়ে নিচের দিকে এগোলো।
নতুন কাউকে দেখা গেলো না । শুধু সিড়ির এককোণায় দাড়িয়ে তার দাদামশাই কে বলতে শুনা গেল।

- আহা মিতিনের মা কেঁদোনা। তুমি ভেঙে পড়লে হবে কিভাবে? এই বরপক্ষ আসেনি তো কী? আমাদের আহালয়ার জন্য আরো হাজারো সুপুত্র আসবে।
কি লাগালে আহা!

আহালয়া আঁচল ছেড়ে ঘোমটা নামিয়ে ছাদে আসলো। রাত কেবল শুরু। জোছনার হালকা বাতাস ও মিষ্টি গন্ধ। আচ্ছা হালকা জোছনায় এই অন্ধকার আকাশটা চাঁদের আলোয় এতো সুন্দর দেখায় কেনো? অথয এই বিষাদময় ধরণীতে তাকে আলোকিত করবার মতো কেউ নেই!

বাতাস বইছে , সে গুনগুন করছে-
“ আমায় বানাইলে তুমি কলঙ্কিনী রাধা”


গল্প: অণূঢ়া
লেখা: প্রিম প্রত্যাশা আলম মৌরিন
শিক্ষার্থী, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন